জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশের পুনরুদ্ধার’ হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন শাসক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে যদি দেশে না আসতেন, তা হলে বাংলাদেশ থাকতো না। বাংলাদেশটাই পাকিস্তানে পরিণত হয়ে যেত। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৭ মে বাংলার মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুনর্জন্ম হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।’
বুধবার (১৯ মে) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪ দশকের মানবতার আলোকবর্তিকা দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা বাবা মা ভাই সহ পরিবারের সকল সদস্যদের হারিয়ে দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এসেছিলেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে সারা দেশের পথে-প্রন্তরে, মাঠে-ঘাটে, শহরে-নগরে একটি আওয়াজ উঠেছিল- চলো চলো শেখ হাসিনাকে দেখার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আমরা আবার দেখবো।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন বাংলার মানুষ, বাংলার আকাশ, বাংলার পাখি ও বাংলার বাতাস কেদেঁ ছিল। দেশের মাটিতে পা দিয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিলেন- “আমার রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছে ছিল না, আমার রাজনীতিতে আশার কথা নয়। কিন্ত আজ পিতাকে হারিয়েছি, মাকে হারিয়েছি, পরিবারের সকল সদস্যকে হারিয়েছি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন- সেই স্বপ্ন পূরণ করাই আজ আমার মূল লক্ষ্য। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যদি আমার জীবন বাবার মতো বিলিয়ে দিতে হয় দিবো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো”।’
আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘স্বদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, তার প্রতিটি কথাই আজ বাস্তবায়ন হয়েছে, প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আজ শুধু শেখ হাসিনা নয়, সফল রাষ্ট্রনায়ক নয়, তিনি বাঙালীর জাতির নেতা নয়, তিনি আজ বিশ্বনেত্রী। বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে মানবতার মা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।’
করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘করোনায় পুরো বিশ্ব আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রপরিচালনায় সফল নয়, দলের নেতৃত্বে তিনি সফল। তার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ সহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। এটাই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণ।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘৭৫’এ ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুকে নয়, স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে গুলি করেছিল। ৭৫’এ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালিদের দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের সুফল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেনি- তারা গুলি করেছিল বাংলাদেশের পতাকা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের বুকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান তৈরি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।’
সাবেক ছাত্র নেতা আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি বাংলাদেশে ফিরে না আসতেন- তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ণ প্রাপ্তি তো দূরে থাক, এই দেশটাই সেদিন থাকতো না। এটাই ছিলো সেদিনের বাস্তবতাচিত্র। সেদিন বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। কিন্তু ৭৫’এ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামের সফল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও হত্যা করা হয়েছিল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। সেদিন বাংলাদেশকে নতুন করে পাকিস্তান তৈরি করার চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে এসেছিল বলে গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধার হয়েছে। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নানামুখি উন্নয়নের জোয়ারে আজ পুরো বাঙালী জাতি ভাসছে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির অন্যতম সদস্য সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি প্রমুখ।